কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেঘের কালো হরিণ-চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ।
কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি… বলে যতই গান বাঁধুক না কেন কবি, কৃষ্ণকলির বেদনা কি আমরা জানি? শুধু গায়ের রঙটা চাপা বলে, তাকে যে কত অপমান সহ্য করতে হয় সেই ছোটো বয়েস থেকেই। আর বিয়ের বয়েসে যা ঘটে যে কোনো কৃষ্ণকলির সাথে, তা রীতিমত রোমহর্ষক! অতি যোগ্য মেয়েটিকেও তখন বিয়ে নামক সোনালী বন্ধনে জড়াবার জন্যই অনেক বেদনার্ত অজ্ঞিতার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। দেখা যায় একের পর এক ছেলেপক্ষ আসে আর যায়। পারিবারিক টেনশন বাড়ছে। বৃদ্ধ মা-বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। আর পড়শী ও আত্মীয়স্বজনের কথা শোনে মনে হবে, গায়ের রঙ হবার দায় বা দোষ বুঝি অনন্য এই মেয়েটিরই! আহা আর মেয়েটি, এই গাঢ় বেদনার কথা, অপমানের কথা, কোন গগনের তারাকে জানাবে, বলো? জানানোর কেউ তো নেই। বলবার কেউ তো ছিলও না কোনোদিন। সে শুধু নীল হতে হতে, একদিন তীব্র খাটি হয়ে উঠবে আরো।
কিন্তু আমাদের সবচে বিদূষী ও মেধাবী মেয়েটিকে, আজো, গায়ের রঙের কারণেই যে কেবল ঢুকে যেতে হয় তীব্র অবসাদের ভিতর, তার কি সুরাহা হবে?!
… আহা আর মেয়েটি,
এই গাঢ় বেদনার কথা,
অপমানের কথা,
কোন গগনের তারাকে
জানাবে, বলো? জানানোর
কেউ তো নেই…।
এত কথা মনে এলো, আলভি জুয়েলার্স-এর টিভিসি দেখে। এই বিজ্ঞাপনেও একটা কালো মেয়ের কথাই বলা হয়েছে। যাকে একের পর এক ছেলেপক্ষ এসে, দেখে যায় শুধু! খালা বিদেশ থেকে মেকআপ-বক্স নিয়ে এলেও, আত্মসম্মানবোধের কারণে মেয়েটি তা ছুঁয়েও দেখে না। কিন্তু তাকে নিয়ে, পরিবারের যে অস্বস্তি তৈরী হয়েছে তা তো আর লুকোবার ক্ষমতা নেই মেয়েটার! এইসব গাঢ় অপমান আর পরোয়া সে না করলেও, শুধুমাত্র তার বিয়ে না-হওয়াকে কেন্দ্র করে যে পরিবারটি একটা ঘোরতর সংকটের ভিতর পড়েছে, এটা সে বুঝতে পারে ঠিকই। ফলে সে ছেলেপক্ষের সামনে যায়। যেতে বাধ্য হয়।
তবে বিজ্ঞাপনটা আসলে এই কালো মেয়ের গল্পেই আটকে থাকে না। একটা অসাধারণ টুইস্টের ভিতর দিয়ে মানবিক ও উদারতার উচ্চতর মাত্রা পায় এটি।
২.
বিজ্ঞাপনের কাজ হলো ভোক্তার সাথে যোগাযোগ তৈরী করা। মার্কেটে ব্র্যান্ড ভ্যালু ক্রিয়েট করা। আর এই কাজটি, আলভির বিজ্ঞাপনটিও করেছে। কিন্তু তা করেছে খুবই মানবিক একটা গল্পের ভিতর দিয়ে। কোনো চটকাদারী বা দেখনদারিত্বের মামলা নেই এই গল্পে। বরং যা আছে, তা এই সোসাইটিরই শক্তিশালী প্রেজেন্টেশন। আমাদের সকল কালো মেয়ের জীবনেরই রুঢ় এক বাস্তবতা এই। তার মানে এটা এই ভূগোলেরই আপন এক গল্প। আবার শেষের দিকে এসে, ছেলের বাবা যে উদাহারণটা তৈরী করে, তা নিছক কোনো গল্পের ভিতর আটকে থাকে না। সাহসের পথ দেখাতে শুরু করে। মানবিক মানুষ হতে ডাক দেয় আমাদের। আর এই বিষয়টিকে আলভি জুয়েলার্সের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে, বলা হয়েছে এভাবে,
“প্রচলিত ধারা ভেঙে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু হোক সম্পর্কগুলো। ভালোবাসা আর উষ্ণতা মিশে থাকা এমন সম্পর্কগুলোর শুরুটা হোক একদম স্বর্ণের মতোই খাঁটি। আর এমনই খাঁটি মুহূর্তগুলোর সঙ্গী হোক আলভী জুয়েলার্স। ”
অসাধারণ গল্প। প্রায় ৩ মিনিট দৈর্ঘের এই বিজ্ঞাপনটা মূলত অনলাইন দুনিয়ার জন্য বানানো। মেকিংও দুর্দান্ত। বাংলাদেশের বাস্তবতায় পা রেখে এমন দূর্ধর্ষ ও দুর্দান্ত গল্প আমাদের শোনানোর জন্য, এজেন্সি, কপিরাইটার, ডিরেক্টর ও আলভি জুয়েলার্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজারকে স্যালুট। আপনাদের নতুন নতুন অ্যাডভেঞ্চারের স্বাক্ষী হতে চাই বলে অধীর অপেক্ষায় আছি আমরা!